ঢাকা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান শহর, পূর্ব দক্ষিণ এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে বৃহত্তম শহর এবং ওআইসি দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম শহর। বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ঢাকা মেগা সিটির অন্যতম প্রধান সবুজ এলাকা।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে কিছুটা দূরে মিরপুরে অবস্থিত। শহরের কোলাহল থেকে এটি একটি চমৎকার অবকাশ কেন্দ্র। উদ্যানটি 23° 49'14.0" উত্তর অক্ষাংশ এবং 90° 20'53.7″ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি উত্তরে দিকে ইস্টার্ন হাউজিং, দক্ষিণ দিকে জাতীয় চিড়িয়াখানা, পূর্ব দিকে দুয়ারি পাড়া এবং পশ্চিম দিকে তুরাগ নদী দ্বারা বেষ্টিত। ২১৫.২২ একর ভূমি নিয়ে পশ্চিমে ১৯৬১-১৯৬২ অর্থবছরে এই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৬২ সালে (বাংলা ১৩৭৫ বঙ্গাব্দ) একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় উদ্যানটি প্রতিষ্ঠিত এবং অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ কাউন্সিল (এবিসি) দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। উদ্যানটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বন বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানটি বাংলাদেশের উদ্ভিদের সর্ববৃহৎ সংগ্রহশালা তৈরি করেছে। এটি প্রকৃতিপ্রেমী, উদ্ভিদবিদ এবং পরিবেশবাদী পর্যটকদের জন্য জ্ঞানের আধার। এটি একটি গবেষণা কেন্দ্র এবং গবেষকরা উদ্যান কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। উদ্যানটিকে ৫৭টি সেকশনে সাজানো হয়েছে এর মধ্যে গোলাপ বাগান, মৌসুমী বাগান, ক্যাকটাস হাউজ, অর্কিড হাউজ, ফার্ন হাউজ, শাপলা পুকুর, পদ্ম পুকুর, ০৬টি লেক, ০২টি নার্সারী এবং দর্শনার্থীদের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। উদ্যানটি দেশে এবং বিদেশে অনেক জনপ্রিয়। শিক্ষার্থী, গবেষক, পর্যটক এবং প্রকৃতিপ্রেমী সহ প্রতিবছর প্রায় ১৫ লক্ষ দর্শনার্থী উদ্যানটি পরিদর্শন করেন। উদ্যানটি আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং বিরল জীনপুল সংগ্রহের কেন্দ্র।
এই চমত্কার উদ্যানটিতে ১৪৩টি পরিবারভুক্ত, ৫৯৫টি গণের অধীন ১০৪২ প্রজাতিরও অধিক বিরুৎ, গুল্ম, বৃক্ষ এবং জলজ উদ্ভিদ রয়েছে। উদ্যানটিতে জলজ উদ্ভিদের বিশাল সংগ্রহ সহ প্রায় ৮০,০০০ বৃক্ষ, বিরুৎ এবং গুল্ম রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন- ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি থেকে অনেক বিদেশী উদ্ভিদ উদ্যানে আনা হয়েছে এবং স্থানীয় জলবায়ুর সাথে মানিয়ে এগুলোকে অভিযোজিত এবং নিয়মিতভাবে বংশ বৃদ্ধি (উদ্ভিদের সংখ্যা বাড়ানো) করা হয়েছে। বিদ্যমান উদ্যানটি এক সময় সুপরিকল্পিত এবং শিক্ষা ও বিনোদনের সুবিধা প্রদান করেছিল।
যদিও, এই উদ্যানটির প্রধান লক্ষ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা কিন্তু (এছাড়াও) এটি বাস্তুসংস্থানিক ভারসাম্যের জন্য অধিক সংখ্যক প্রাণিকুলেরও আশ্রয়। উদ্যানে পক্ষীকুলের সংখ্যা প্রচুর এবং ঋতুভেদে দর্শনার্থীরা স্থানীয় পাখির সাথে প্রচুর পরিযায়ী পাখিও দেখতে পান। উদ্যানে ১৪টি জলাধার আছে যা বিভিন্ন প্রজাতির জলজ পাখির আশ্রয়স্থল। আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যের অপর্যাপ্ততা এবং অন্যান্য অনিবার্য পরিস্থিতির কারণে ঢাকা শহরে খুব কম প্রজাতির পাখি দেখা যায়। এরূপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান পাখি পর্যবেক্ষক এবং গবেষকদের জন্য ঢাকা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে শতাধিক প্রজাতির উপরে পাখির সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী, উভচর এবং সরীসৃপও উদ্যানে পাওয়া যায়।